রোজায় এসিডিটি / গ্যাস্ট্রিক ইফতার থেকে সেহরী পর্যন্ত কী খাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে। রোজা থাকাকালীন এসিডিটি থেকে মুক্তি পেতে কিছু নিয়ম মেনে চললে এসিডিটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
অতিরিক্ত খাবার খেলে কিংবা অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে কিংবা বেশি বেশি তৈলাক্ত খাবার খেলে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায় এবং প্রদাহ হয় যাকে আমরা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে থাকি।রোজায় অনেক সময় বিকেলের দিকে অথবা ইফতার ও সেহরীর পর পেটে গ্যাস হয়। এতে হজমে সমস্যা, পেট ফাঁপা, পেট জ্বালাপোড়া করা, ঢেকুর ওঠা, পেট ব্যথা- ইত্যাদি হয়ে থাকে। পেটে মারাত্মক অস্বস্তির সৃষ্টিও হতে পারে। এ অবস্থা যে শুধু যাদের এসিডিটি আছে তাদের হচ্ছে এমন নয়। যারা নিয়মিত রোজা রাখছেন, তাদেরও এ সমস্যা দেখা যায়। নিচের টিপস গুলো মেনে চললে এসিডিটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
১. ইফতার থেকে সেহরী পযন্ত পর্যাপ্ত পানি পান করুন(২-২.৫ লিটার)।কারণ, আমাদের হজম ও পরিপাকক্রিয়ায় পানি খুবই জরুরি একটি উপাদান। আর হজম ও পরিপাক যদি স্বাভাবিক হয়, তাহলে অ্যাসিডিটি এমনিতেও হবে না।
২. ইফতারে অতিরিক্ত খাবার এক সাথে না খেয়ে পরিমিত ও অল্প অল্প করে সুষম খাদ্য খান। সহজে হজম হয় এমন খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন। অধিক ভাজাপোড়া, মিষ্টি, তেল-মসলাযুক্ত,ঝাল খাবার পরিহার করুন। এসিডিটি কমাতে ইফতারে খেজুর আর নরমাল পানি খেয়ে শরবত হিসাবে (দইয়ের লাচ্ছি, ইসবগুল ও তোকমাদানা শরবত,পেঁপের শরবত, তরমুজের শরবত, বেলের শরবত) রাখতে পারেন।এছাড়া চিড়া দই, মুড়ি, খই, স্যুপ,পাতলা খিচুড়ি, ভাত, সবজি, ডিম, সিদ্ধ ছোলা রাখা যেতে পারে।
৩. যেহেতু অল্প করে বার বার খেতে বলা হয় তাই রাতের খাবার কোন ভাবেই বাদ দেওয়া যাবেনা।রাতের খাবারে ভাত, মাছ / মাংস,সহজ পাচ্য সবজি, পাতলা ডাল রাখা যেতে পারে/দুধ-ওটস, টকদই দিয়ে তেরি ফলের সালাদ( টক ফল কম খেলেই ভালো),ঠান্ডা দুধের সাথে ২-৩ পিস খেজুর বা দুধ সাগু বা ওটস রাখতে পারেন খাদ্য তালিকায়।
৪. এসিডিটি প্রতিরোধে সেহরীর খাবার হবে সুষম ও পুষ্টিকর।
সেহরীর খাবার কোন ভাবেই স্কিপ করা যাবেনা।সেহরীতে ভাত/ রুটির সাথে মাছ, মাংস,ডিম, সবজি সবচেয়ে ভালো খাবার।ডাল ও শাক সেহরীতে না রাখাই ভালো।টক দই সাথে ২-৩ টা পুদিনাপাতা রাখতে পারেন যা খাবার গুলা ভালোভাবে হজমে সাহায্য করে । এছাড়া ১চা চামচ মৌরি / Saunf সেহেরীতে খেলে এটা এন্টাসিড হিসাবে কাজ করবে।
৫. খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুয়ে পড়বেন না। প্রতিবার খাবার পর কিছুসময় বিরতি নিয়ে ১০-১৫ মিনিট হাটাহাটি করবেন। এতে করে খাবার প্রোপারলি হজম হবে। খাবারের মাঝখানে বার বার পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।সেহরীর খাবার আযানের ২০-৩০ মিনিট আগে খাবেন। যাতে আপনার হাতে পানি খাবার পযাপ্ত সময় থাকে।
উল্লেখ্য ইফতার ও সেহরীতে তাড়াহুড়া করে খাবেন না। খাওয়ার সময় ভালোভাবে চিবিয়ে খাবেন। সব খাবারে সবার এসিডিটি হয় না, তবে আপনার যেসব খাবার খেলে এসিডিটি বাড়ে, সেগুলো এড়িয়ে চলুন।কড়া চা-কফি কিংবা ক্যাফেইন পান করা থেকে বিরত থাকুন। এগুলো হজমে সমস্যা করে ও এসিডিটির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
মানতাসা তাসনিম
সিনিয়র ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান ও নিউট্রিশনিস্ট
শীপ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতাল